খেজুরের গুড় 1 kg
যশোরের খেজুরের গুড়
খেজুর গুড়ে রয়েছে ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামজাতীয় খনিজ উপাদান। যারা নিয়মিত এক চামচ গুড় খান, তারা পাবেন খেজুর গুড়ের নানান উপকারিতা। খেজুর গুড় ওজন কমাতে দারুণ কাজ করে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত ডায়েটে রাখতে পারেন এক চামচ খেজুর গুড়।
বাঙালির শীতের দিনের অন্যতম আকর্ষণ খেজুর গুড়ের তৈরি পিঠা-পায়েস। প্রাচীন কাল থেকে অবিভক্ত ভারতে খেজুর গুড়ের জন্য যশোর জেলা বিখ্যাত ছিল। এজন্য একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে ‘যশোরের যশ, খেজুরের রস।’
দিন বদলের সাথে যশোরের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শুধু পরিবর্তন হয়নি খেজুরের রস সংগ্রহ এবং গুড়-পাটালি তৈরির পদ্ধতি। গাছিরা প্রথমে খেজুর গাছের মাথা পরিষ্কার করেন। এরপর শুরু হয় রস সংগ্রহ। চিরাচরিত সনাতন পদ্ধতিতে মাটির ভাঁড়ে রাতভর রস সংগ্রহ করা হয়। ভোরের সূর্য ওঠার আগে গাছিরা রস ভর্তি মাটির ভাঁড় গাছ থেকে নামিয়ে পরে মাটির হাড়িতে কিংবা টিনের বড় হাড়িতে জ্বালিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি করে। গ্রাম-বাংলায় এখন চোখে পড়ছে খেজুর রস সংগ্রহের দৃশ্য। গাছিরা এখন মহা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সুমধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে গুড়-পাটালি তৈরির উৎসব। গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কী ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরি করার ধুম পড়েছে। সকালে এবং সন্ধ্যায় কাঁচা রস খেতে খুবই মজাদার। রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার (চিতই পিঠা) স্বাদই আলাদা। নলেন, ঝোলা ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন অর্ধ ভোজন। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। নলেন গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা, তিল ভাজা মিশালে আরো সুস্বাদু লাগে।
যশোরের ঐতিহ্যবাহী গুড়-পাটালির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। ব্রিটিশ আমলে খেজুর গুড় থেকে চিনি তৈরি করা হতো। বিলেত থেকে সাহেবেরা দলে দলে যশোর অঞ্চলে এসে চিনির কারখানা স্থাপন করে চিনির ব্যবসা করত। চিনির কারখানাগুলো চৌগাছা এবং কোটচাঁদপুর শহরের আশেপাশে কেন্দ্রীভূত ছিল।
যশোরের ইতিহাস থেকে জানা যায় চৌগাছা এবং কোটচাঁদপুর এর আশেপাশে সে সময় প্রায় পাঁচশ’ চিনি কারখানা গড়ে উঠেছিল। তখন কলকাতা বন্দর দিয়ে খেজুর গুড় থেকে উৎপাদিত চিনি রফতানি করা হতো। মূলত ১৮৯০ সালের দিকে আখ থেকে সাদা চিনি উৎপাদন শুরু হলে খেজুর গুড় থেকে তৈরি চিনির উৎপাদনে ধস নামে। একে একে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। খেজুরের গুড় থেকে চিনি তৈরি না হলেও এখন পর্যন্ত বাঙ্গালির কাছে খেজুর গুড়-পাটালির কদর কমেনি।
উপজেলার বাটিকামারী গ্রামের রাইহান, চাঁদপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, বাদেখানপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দীন, সিংহঝুলি গ্রামের রহিদুল ইসলাম জানান- গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়, পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গত বছরের তুলনায় গুড়-পাটালির দাম দ্বিগুণ হবে।
তবে বনবিভাগ জানিয়েছে, যশোর অঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের বনবিভাগের উদ্যোগে খেজুর গাছ রোপণের কাজ শুরু করেছে। ‘বৃহত্তর যশোর জেলার জীব বৈচিত্য সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে রোপিত হয়েছে কয়েক লাখ খেজুর গাছের চারা। তবে ইট ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ না করলে এক সময় খেজুর গাছ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শুধু আরব্য উপন্যাসের গল্পে পরিণত হবে।